শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১১:১১ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :

শ্রীমঙ্গলে ১৫০০ একর সরকারি জমি বেদখল

তরফ নিউজ ডেস্ক: মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে চার যুগেরও বেশি সময় ধরে বালিশিরা পাহাড় ব্লক-১,২,৩ লাংলিয়াছড়া ও জাম্বুড়াছড়া এলকায় সরকারি প্রায় ১৫০০ একর খাস জমি একটি প্রভাবশালীচক্র দখল করে রেখেছে।
স্থানীয় ভূমি অফিসের লোকজনদের ম্যানেজ করে অবৈধ দখলদাররা বছরের পর বছর এই বিশাল আয়তনের সরকারি জমি ভোগ দখলে রেখেছে। ফলে সরকার কয়েক কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
জানা গেছে, উপজেলার সিন্দুরখান ইউনিয়নের লাংলিয়াছড়া, জাম্বুরা ছড়া মৌজার ভারতীয় সীমান্তবর্তী এলাকায় স্থানীয় প্রভাবশালী একটি ভূমি দখলদার চক্র প্রায় ১০০০ একর জমি দখল করে।
এসব দখলদারদের অনেকের শ্রীমঙ্গল শহরে দালান বাড়ি-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বিত্তশালীরা দখলকৃত ভূমিতে উৎপাদিত লেবু, আনারস, কলাসহ বিভিন্ন ফসল থেকে বছরে কোটি কোটি টাকা আয় করলেও সরকার এ থেকে কোনো রাজস্ব পাচ্ছে না।
স্থানীয়রা জানিয়েছে প্রশাসনের নাকের ডগায় শতকোটি টাকা মূল্যের সরকারি এসব খাস জমিতে পাকা স্থাপনা নির্মাণ করলেও স্থানীয় ভূমি অফিস থেকে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।
জানা যায়, লাংলিয়াছড়া ১৯৭৮ সালের প্রথম দিকে ৩২টি ভূমিহীন পরিবার প্রায় ৫০ থেকে ৬০ একর ভূমিতে কাঁচা ঘরবাড়ি তৈরি করে বসবাস শুরু করে। এসব বাড়িঘরের আশপাশের কিছু টিলাজমি পরিষ্কার করে লেবু-আনারসের চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করতে থাকে। পরবর্তী সময়ে শহরের কিছু প্রভাবশালীদের নজর পড়ে এই ভূমির ওপর। তারা বসবাসরত ভূমিহীনদের কাছ থেকে ধীরে ধীরে নামমাত্র মূল্যে এসব জমির ‘দখল’ হাতিয়ে নেয়। ভূমিদস্যুদের দাপটের মুখে একে একে অধিকাংশ ভূমিহীন পরিবার উচ্ছেদ হয়ে যায়। এরপর তিনযুগ ধরে কয়েক দফা এসব জমির ‘দখল’ উচ্চদামে বেচাকেনা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়েকটি দাগে এই ৫৬৪ একর খাস জমি সিন্দুরখান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আছকির মিয়া, ব্যবসায়ী দুলাল হাজী, শাহাদৎ মিয়া, বল্টু বাবু, শুকুমার রায়, রবীন্দ্র তরনি, শ্যামল দাস, কাজল পাল, হেকিম মিয়া, খতিব মিয়া, চুনু মিয়া ও ফুল মিয়া মহালদারসহ আরো কিছু ব্যক্তির দখলে রয়েছে।
সরজমিন দেখা গেছে, সেখানে জালাল মিয়া, রহমান মিয়া, শহিদ, বাবুল মিয়া, হেকিম মিয়া, আবু তাহেরসহ অনেকে সরকারি খাস জমির ওপর পাকা ঘরবাড়ি নির্মাণ করে অবৈধভাবে বসবাস করছেন। অনেক পরিবারে নিজস্ব গাড়ি রয়েছে। বিদ্যুৎ লাইন সংযোগও নেয়া হয়েছে। যদিও বৈধ জমির কাগজপত্র ছাড়া বিদ্যুৎ সংযোগের আবেদন করার সুযোগ নেই। বেশির ভাগ বাড়িঘর নির্মাণে কাটা হয়েছে পাহাড়-টিলা। লেবু আনারসের বাগান সৃজন করতে বনাঞ্চল উজাড় করা হয়েছে।
সরজমিন খাস জমিতে পাকা ঘর নির্মাণের বিষয়ে স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান আব্দুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে অনুমতি নেয়া হয়েছে। সিন্দুরখান ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হেলাল জানান, ‘পাকা ঘর নির্মাণে এ পর্যন্ত আমার কাছে কেউ আবেদন করেনি। তাছাড়া সরকারি খাস জমিতে পাকা স্থাপনা নির্মাণে অনুমতি দেয়ার কোনো নিয়ম নেই।
সিন্দুরখান ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ফুল মিয়া মহালদার বলেন, লিজ বন্দোবস্ত পেতে সরকারের কাছে আমি আবেদন করেছি। আমরা চাই সরকার রাজস্ব পাক। এই ভূমির বিষয়ে সরকার যে সিদ্ধান্ত নেবে আমরা তা মেনে নেব।
ব্যবসায়ী দুলাল হাজী বলেন, ১৯৯০ সালে কিছু দখলদারদের কাছ থেকে দখল কিনে লেবু বাগান করে আসছি। সরকারি লিজ বন্দোবস্ত রয়েছে কিনা এমন প্রশ্ন করলে দুলাল হাজী নেই বলে তিনি জানান, সবাই যেভাবে আছে আমিও সেভাবেই আছি।
উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার শ্রী পদ দেব বলেন,‘বালিশিরা পাহাড় ব্লক-১, ২ ও ৩ এর প্রায় সাড়ে ৫শ একর সরকারি জমি দখলদারদের জরিপ কাজ ইতিমধ্যে সমাপ্ত হয়েছে। লাংলিয়াছড়ায় ও জাম্বুরা ছড়া এলাকায় আরো ১০০০ একর দিখলীকৃত জমি ও দলখলকারদের তালিকা প্রণয়ন করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে উদ্ধারের জন্য পাঠানো হবে।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, সরকারি খাস জমিতে কেউ পাকা স্থাপনা এমনকি টিনের ঘর বাড়ি পর্যন্ত তৈরি করতে পারে না। এ বিষয়ে শিগগিরই তালিকা তৈরি করে উদ্ধারের ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(সূত্র : মানবজমিন অনলাইন)

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

ওয়েবসাইটের কোন কনটেন্ট অনুমতি ব্যতিত কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design & Developed BY ThemesBazar.Com